October 22, 2024, 5:37 am

টর্চ-মোমবাতির আলোয় চলছে শেবাচিমের চিকিৎসা!

টর্চ-মোমবাতির আলোয় চলছে শেবাচিমের চিকিৎসা!

বিদ্যুৎহীন শেবাচিমের পুরুষ সার্জারী ওয়ার্ডে টর্চ লাইটের আলোয় এক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ শাখাওয়াত হোসেন।

  • বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হাসপাতালের ৫টি ইউনিট
  • রেডিওলজি বিভাগে বিদ্যুৎ নেই ১৮ দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। এমনকি হাসপাতালের অতি গুরুত্বপূণ সার্জারী বিভাগের মিনি ওটি গুলো চলছে মোবাইলের টর্চ লাইটের সাহায্যে। আর গত দুই সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে সিটি স্ক্যান, এক্স-রে, আল্টাসোনগ্রাম পরীক্ষা নিরীক্ষা। এমন দুরবস্থা আগামী সপ্তাহ জুড়ে চলবে বলে দাবী সংশ্লিষ্টদের। হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের বি ব্লকের নিচ তলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে করে ১ম তলায় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী কর্তৃক পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবা মুলক প্রতিষ্ঠান সন্ধানী, মেডিসিন ক্লাব, বঙ্গবন্ধু ক্লাব ও যুব রেড ক্রিসেন্ট এবং মানসিক ওয়ার্ডের সেবা কার্যক্রম ব্যহত হয়। ওই ব্লকের ২য় তলার গুরুত্বপূণ রেডিওলজী এন্ড ইমেজিং বিভাগের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গত দুই সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে সিটি স্ক্যান, এক্স-রে, আল্টাসোনগ্রাম পরীক্ষা নিরীক্ষা। একই কারনে বি ব্লকের ৩য় তলায় মেডিসিন-১ নং ইউনিট, ৪র্থ তলায় মহিলা মেডিসিন ১, ২, ৩ ও ৪ নং ইউনিটের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এরই মধ্যে গত বুধবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে হাসপাতালের বি ব্লকের ন্যায়ে জি ব্লকের ১ম তলা থেকে ৫ তলা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। সেই থেকে ওই ব্লকের গুরুত্বপূণ ১ম তলায় মেডিসিন আউটডোর, টিকা দান কেন্দ্র, গাইনি বহিঃ বিভাগ, জেনারেল স্টর’র কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। সেই জি ব্লকের ২য় তলায় গাইনী পেয়িং বেড ও ৩য় থেকে ৫ তলায় সার্জারী ১, ২, ৩ ও ৪ নং ইউনিট এবং ইউরোলজী বিভাগের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শুক্রবার জি ব্লকের ৩য় তলায় সার্জারী-২ নং ইউনিট ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীরা রয়েছেন অন্ধকারে। ওই ইউনিটে শুক্রবার ছিলো রোগী ভর্তি রোস্টার। কোন শয্যা খালি নেই, নতুন রোগী ভর্তি হলে তাদের থাকার স্থান দেয়া হচ্ছে ফ্লোর কিংবা মেঝেতে। কিন্তু সেখানেও অন্ধকার। তাই এক অপরের সাথে ধাক্কা লাগছে। রোগী ও স্বজনরা মোবাইলের টর্চ দিয়ে আলোর দেখা পাচ্ছে। এমনকি নার্স ও চিকিৎসকরা মোবাইলের টর্চ ও মোমবাতি জ্বালিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। সার্জারী -২ নং ইউনিটের ইনচার্জ নাসিং কর্মকর্তা রিতা বাড়ৈই বলেন, সকালে আমরা যারা উিউটিতে এসেছি তাদের মোবাইলের চার্জ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সারাক্ষণ মোবাইলের টর্চ অন করে কাজ করতে হচ্ছে। গত বুধবার থেকে এ অবস্থা বিরজ করতে। বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীদের পাশাপাশি আমরাও নিরাপত্তাহিনতায় ভুগছি। অন্ধকারে চুরির ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাজারী-২ নং ইউনিটে বুধবার বিকেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন, বুধবার আমাদের ইউনিটে রোগী ভর্তির দিন। সকাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক দূর্ঘটনা জনিত কারনে আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাদের জরুরী ভিত্তিতে অপারেশনের প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের অপারেশন করা খুবই দুরহ। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে মোবাইলের টর্চ কিংবা মোমবাতির আলোতে অপারেশন করে যাচ্ছি। শেবাচিম হাসপাতালে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত গনপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফিরোজ আলম জানান, গত ২৫ অক্টোবর ঘুর্নিঝড় চিত্রাং’র প্রভাবে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিতরে অস্বাভাবিকভাবে পানি প্রবেশ করে নিজ চলার প্রায় দুই ফুট প্লাবিত হয়। এ কারনে আন্ডার গ্রাউন্ডের (মাটির নিচে) বিদ্যুৎ সংযোগের তার বিকল হয়ে পরে। একারনে ওই সময় (২৫ অক্টোবর) দুটি ফেইজ পুরে যায়। ফলে হাসপাতালের বি ব্লকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। স্থানীয় ভাবে মেরামতে পর ওই ফেইজ ঠিক হলেও তা স্থায়ী হয় নি। তার সাথে গত ৯ নভেম্বর বিকালে জি ব্লকের ফেইজ দুটি বিকল হয়। স্থানীয় ভাবে জোড়া তালি দিয়ে এই চারটি ফেউজ মেরামত করা সম্ভব হয় নি। তিনি আরো বলেন, ৫০ বছরেরও অধিক এই হাসপাতালের বয়স। প্রতিষ্ঠাকালে এই হাসপাতালের সকল বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচ থেকে নেয়া হয়েছিলো। বয়সের কারনে ওই লাইনের তার গুলো বিকল হয়ে পড়ছে। তাই এখন আর মাটির নিচ থেকে বিদ্যুতের সংযোগ নেয়া হবে না। ভবনের ভিতরেই সরসরি বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হবে। কিন্তু একাজে অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন। তিনি বলেন, বর্তমানে যে দুটি ব্লকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই সেগুলো মেরামত করতে ২৪ থেকে ২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। আশাকরি চলতি সপ্তাহে মেরামতের কাজ শুরু হবে। তবে আগামী সপ্তাহ ছাড়া এ সমস্য সমাধান সম্ভব নয়। হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে হাসপাতালের জি ও বি ব্লকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এতে ওই দুই ব্লকে মেডিসিন, সার্জারী, ডেন্টাল, মানসিক ও রেডিওলজী এন্ড ইমেজিং বিভাগের কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে ওই ওয়ার্ড গুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করতে গনপূর্তকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের এ কাজটি করতে সময়ের প্রয়োজন বলে তারা দাবী করেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com